
সাজ্জাদ করিম সিফাত :
আলহাজ্ব ফজলুল করিম। আমার বাবা। তিনি ১৯৯১ সাল হতে ১০ মে ২০২০ সাল পর্যন্ত উখিয়া কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় হতে আমার বাবা আপ্রাণ প্রচেষ্টাই আজ কলেজ এই অবস্থানে।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময় হতে আমার বাবা অনেক মানুষের অত্যাচার সহ্য করেছেন। অনেক প্রতিকূল অবস্থার মুখোমুখি হয়ে নিজের লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেছেন। লক্ষ্য উদ্দেশ্য ছিল একটাই মফস্বল গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা যাতে ভাল করে পড়াশুনা করে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেন।
কলেজের জন্য বিন্দুমাত্রও তিনি পিছু পা হয়নি। অনেকে অনেক বাঁধা সৃষ্টি করেও আমার বাবাকে পিছু হাঁটাতে পারেনি। কারণ আমার বাবা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল। আমার বাবার সহযোগী হিসেবে মনবোল যোগানোর মানুষ ছিল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী এবং কলেজ ভুমিদাতা জনাব বাবু বিধু ভুষণ বড়ুয়া। এবং জনাব কামাল আব্দু নাসের।।
১৯৯১ থেকে ২০২০ সাল। আমার বাবার আপ্রাণ চেষ্টায় কলেজে বিভিন্ন কোর্স চালু করতে সক্ষম হয়েছেন এবং সফল হয়েছেন। এইচএসসি, ডিগ্রি পার্স কোর্স, বিএম কোর্স, এবং সর্বশেষ স্নাতক (সম্মান) কোর্সের ৭ টি বিষয়ে অনার্স সম্মান কোর্স চালু করতে সক্ষম হয়।( বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ব্যবস্হাপনা, হিসাব বিজ্ঞান, অর্থনীতি,সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস)।
বর্তমানে উখিয়া টেকনাফ ও কক্সবাজার জেলা বাহিরের অনেক ছাত্রছাত্রী অনার্স সম্মান কোর্সে অধ্যায়ন করে প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে সাফল্য লাভ করেছেন।
কলেজে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক শিক্ষক-কর্মচারি আছেন, তাদের সকলের নিয়োগপত্রে আমার বাবার স্বাক্ষর। চাকরি করার সুযোগ দিয়েছেন কলেজ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যারা আমার বাবা কর্মজীবনের সহকর্মী ছিলেন।
সেই সাথে আমার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করাকালীন আমার বাবাকে ২০০৮ সালে তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্যরা কিছু মিথ্যা বানোয়াট বিল ভাউচার দেখিয়ে তৎকালিন উখিয়া উপজেলা নিবার্হী অফিসার শামীম আল রাজী এবং এডভোকেট শাহজালাল চৌধুরীসহ প্রমুখ ব্যাক্তিবর্গের স্বৈরাচারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কলেজ হতে সাময়িক বরখাস্ত (সাসপ্যান্ড) করেছিলেন এবং বেতন বন্ধ করে দেন। সেই আদেশ জারি করেছিলেন পরিচালনা কমিটির শামীম আল রাজী এবং এডভোকেট শাহজালাল চৌধুরী।
বরখাস্ত করার পর কলেজে কোন শিক্ষক কর্মচারী হতভাগ্য মানুষটার খবর কেউ নেননি। যত পেরেছেন তারা উল্লাস করেছেন এবং বড় বড় আসরে হাসি তামাশার বস্তু বানিয়েছিলেন।
বরখাস্ত আদেশটি শেষ ছিল না, এরপরও তারা ক্ষান্ত হয়নি। সাথে আরও কয়েকজন শিক্ষক এবং গর্ভণিং বডির সদস্যরা অডিট কমিটি গঠন করেন এবং অডিট কমিটির সদস্যরাও নানা রকম ভুয়া (তাদের নিজ হাতে বানানো) বিল ভাউচার যোগ করে দিয়ে উর্ধতন কমিটির কাছে রিপোর্ট প্রদান করেন। রিপোর্টের বিষয়বস্তু ছিল অর্থ আত্মসাৎ এবং দুনীর্তিকে তারা উল্লেখযোগ্য বিষয়বস্তু নিয়ে রিপোর্ট প্রদান করেন।
এরপর আমি, আমার বড় ভাই, আমার মা এডভোকেট শাহজালাল চৌধুরীর বাড়িতে গিয়ে পায়ে ধরে অনেক অনেক বার অকুতি মিনতি করেছি। কিন্তুু তাহার পাশান মনে আমাদের কোন স্হান হয়নি।
এসব করেও তারা শান্ত হয়নি। কিছু কলেজের শিক্ষক এবং রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গ বাদী হয়ে আমার বাবার নামে ৪/৫ টি হাইকোর্টে মামলা করেন। আমার বাবাও তাদের মামলা করাতে ভয় পায়নি। বাবা সব মামলা চালিয়ে গিয়েছেন।
সেই ২০০৮ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রায় চার বছর আমার বাবা বরখাস্তকালীন সময় পার করেন।
কারণ আমার বাবা কোনদিন অসৎ পথে উপার্জন করেন নি এবং দুনীর্তি করেননি। বিশ্বাস ছিল আল্লাহর প্রতি। কারণ আল্লাহ সুষ্ট বিচার করবেন। সেই সময়টাতে আমাদের যারা অর্থ (ঋণ) সহায়তা দিয়েছিলেন আমরা আপনাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব।
শেষ ২০১২সালে যখন আমার বাবার বরখাস্ত অাদেশ প্রত্যাহার করার জন্য মহামান্য হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশ দেন যে আমার বাবাকে স্ব-পদে নিয়োগ দেওয়া জন্য।
কিন্তুু নির্ধারিত তারিখে স্ব-পদে বহাল করার জন্য সেই সময়ের কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক সাংসদ আলহাজ্ব আব্দু রহমান বদি (এমপি) মিটিং অয়োজন করেও পরে সেই মিটিং বাতিল করতে হয়েছিল। কারণ বহাল আদেশ জারি করার পরের কিছু যড়যন্ত্র করী বাদশা মিয়া চৌধুরীকে বাদী করে আরেকটা মামলা করেন এবং বহাল আদেশের উপর রিট করেন।
এর ৩ মাস পর হাইকোর্ট বেঞ্চ আবার আমার বাবাকে স্ব- পদে বহাল এবং দায়িত্ব পালন করার আদেশ জারি করেন।।এরপর আলহাজ্ব আব্দু রহমান বদির আন্তরিক প্রচেষ্ঠায় এবং আল্লাহর রহমতে আমার বাবা ৪ বছর ৮ মাস পরে স্ব- পদে দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন।
আমাদের পরিবার আপনার (আলহাজ্ব আব্দু রহমান বদি) প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকিব। আপনার অবদান আমরা কোন দিন ভুলব না।
এরপর আমার বাবা ২০২০ সালে ১০ মে অবসর গ্রহণ করেন।
আজ ২৪শে জানুয়ারি ২০২২ অনানুষ্ঠানিকভাবে কলেজ থেকে বিদায় নেন।
বন্ধনে আটকে থাকবে স্মৃতি উপহার দিয়ে, যাওয়ার বেলায় যে চোখের কোণায় দু’ ফোটা পানি ও পরম মমতায় মাখিয়ে। কলেজে বাবার প্রিয় মুখগুলো অনেক অনেক ভাল থাকুক।
আমার বাবার দায়িত্ব পালন করার সময় যদি কোন সহকর্মী, ছাত্রছাত্রীদের মনে কোন কষ্ট দিয়ে থাকে, তাহলে আপনাদের সবার কাছে ক্ষমা প্রত্যাশা করছি।
সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন, যাতে সুস্থতার সহিত জীবনযাপন করতে পারেন।
লেখক : উখিয়া কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ফজলুল করিম এর ছেলে।
পাঠকের মতামত